প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ও পৌরানিক কাহিনীতে বিভিন্ন স্থানগুলোকে খুজে বের করার প্রয়াস নিয়ে থাকেন। গ্রিক মহাকবি হোমারের ওডিসিতে এভাবে বর্নিত ট্রয় নগরী পূরাকীর্তি অভিযানের মাধ্যমে খুজে বের করা হয়েছে। পবিত্র কোরানে উল্লেখিত শেবার রানী বিলকিসের প্রসাদ কে এভাবে এক প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে ইথিওপিয়ার আকসুম নগরীতে খুজে পাওয়া গেছে। দাম্ভিক রাজা সাদ্দামের বেহেশত বলে কথিত ইরম নগরীর ধ্বংসাবাশেষ ও আবিস্কার করা হয়েছে।
কয়েক হাজার বছরের পূরানো কাহিনী পৃথিবী পাপে পরিপূর্ন। সৃষ্টিকর্তা সামান্য কিছু নির্বাচিত মানুষ ও পশুপাখি ছাড়া সব কিছু এক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ধ্বংস করে দেবেন। প্রায় সমস্ত ধর্ম কাহিনী আর অনেক পৌরানিকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আছে। চলুন দেখি ইসলাম ধর্মে কি বলে-
সূরা হুদ ৪২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত –
আয়াতে বলা হয়েছে, "পর্বত প্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এ (নৌকা) তাদের নিয়ে বয়ে চললো, নূহ তার পুত্রকে যে (তাদের ডাকে) পৃথক ছিল, ডেকে বললেন, হে বৎস আমাদের সঙ্গে আরোহন কর এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না।"
এবার সূরা হুদের ৪৪ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ "(আল্লাহর শাস্তি ও কাফেরদের ধ্বংসের পর) বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ তুমি ক্ষান্ত হও,এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো, নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হলো এবং বলা হলো ধ্বংসই সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের পরিণাম।"
বাইবেলের জেনেসিসে আছে নোহার কথা
9 ¶ These are the generations of Noah: Noah was a just man 2 Pet. 2.5 and perfect in his generations, and Noah walked with God.
10 And Noah begat three sons, Shem, Ham, and Japheth.
11 ¶ The earth also was corrupt before God; and the earth was filled with violence.
12 And God looked upon the earth, and, behold, it was corrupt; for all flesh had corrupted his way upon the earth.
13 And God said unto Noah, The end of all flesh is come before me; for the earth is filled with violence through them; and, behold, I will destroy them with the earth.
14 Make thee an ark of gopher wood; rooms shalt thou make in the ark, and shalt pitch it within and without with pitch.
15 And this is the fashion which thou shalt make it of: The length of the ark shall be three hundred cubits, the breadth of it fifty cubits, and the height of it thirty cubits.
16 A window shalt thou make to the ark, and in a cubit shalt thou finish it above; and the door of the ark shalt thou set in the side thereof; with lower, second, and third stories shalt thou make it.
রাশিয়ান গোয়েন্দা বিমান নিয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। গরম পড়েছে। সকালের সোনারোদে আরারাত পর্বতের চূড়ায় ঝকমক করছে বরফের স্তর। হঠাৎ কী যেন চোখে পড়তেই নড়েচড়ে বসলেন লেফটেনেন্ট। রুটিন চেকআপের জন্য বিমানটা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেলে সদর দফতরে রিপোর্ট করার কথা। কিন্তু আরারাত পর্বতে যা দেখলেন তাতে বিস্ময়ে তখনই খবর দেয়ার কথা মনেই পড়ল না তার। পাহাড়চূড়ায় আছে বিশাল এক হিমবাহ হ্রদ। সেখানেই পুরনো জাহাজের মতো কিছু একটা চোখে পড়ল তার। বিমান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যতটা সম্ভব কাছে থেকে সেটা দেখার চেষ্টা করলেন রস্কোভিতস্কি। সেটা ১৯১৬ সালের ঘটনা।
তবে খবরটা চাপা রইল না। ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে-কানাচে। সবার ধারণা, নুহ নবীর সেই বিখ্যাত জাহাজকে খুঁজে পেয়েছেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। যে জাহাজে চড়ে নুহ নবী ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ব্যস। দলে দলে মানুষ এসে হাজির হলো আরারাত পর্বতের গোড়ায়। পাহাড় তন্ন তন্ন করে তারা খুঁজে বের করল সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। শুরু হলো ছবি তোলা আর প্রমাণ সংগ্রহের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু সবকিছু করে ফেলার আগেই রাশিয়ায় শুরু হয়ে গেল বিপ্লব আর গৃহযুদ্ধ। রাশিয়া জুড়ে তখন দারুণ অস্থিরতা। বিপ্লবের উত্তেজনায় তখনকার মতো চাপা পড়ে যায় নুহ নবীর জাহাজের বিষয়টি। বিপ্লবের পর আবারো শুরু হয় খোঁজ।
১৯৫৩ সালে জেফারসন গ্রীন নামে এক এক প্রকৌশলী হেলিকপ্টারে চড়ে আরারত পাহাড়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় দেখতে পেলেন বড়সড় চৌকো আকৃতির এক বাক্স ঝুলে আছে খাড়া পাহাড়ের কিনারা ঘেষে। তার বেশির ভাগই বরফে আবৃত হয়ে আছে। আবারো লাইম লাইটে চলে আসে নূহ নবীর নৌকা। তিনি কিছু ছবি তুলে আনেন।
১৯৫৫ সালে এক ফরাসী পর্বতারোহী ফার্নান্স নাভারা আরারাত পাহাড়ে উঠতে গিয়ে বহু প্রাচীন কিছু কাঠের টুকরো পান। কালো রঙের ফসিল হয়ে যাওয়া সেই কাঠের টুকরো স্পেনের গবেষনাগারে C-14 টেষ্ট করে জানা যায় প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পূরানো
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্টের স্পেস কমিটির সদস্য ফ্রাঙ্ক মস জানালেন উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত আরারত পর্বত মালায় যে নৌকার আকৃতি দেখা যায় সম্ভবত ওটাই নূহ (অঃ) নৌকা।
তুরস্ক সরকারের নিরাপত্তার কড়াকড়ি আর রাশিয়ানদের হুমকি-ধমকিতেও খোঁজার গতি কমে না। এখন পর্যন্ত সেই জাহাজ নিয়ে কৌতূহল আর আগ্রহ বজায় আছে আগের মতোই। ধর্মগ্রন্থগুলোর যে জাহাজে চড়ে নুহ নবী মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেটি ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি করা বিশাল একটি জলযান।
শোনা যায়, কম করে হলেও এটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫০ ফুট ও প্রস্থে ৭৫ ফুট। ভেতরের ডেকসহ এটির উচ্চতা ছিল ৪৫ ফুট। বিংশ শতাব্দীর আগে নির্মিত সবচেয়ে বড় জলযান হিসেবে স্বীকৃত এই জলযান। এর নির্মাণকৌশল আর নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক। শোনা যায়, মহাপ্লাবনের শেষে আরারাত কিংবা জুদাই পর্বতের আশপাশে কোথাও নোঙ্গর ফেলেছিল সেই জাহাজ। তবে এদিক থেকে আরারাত পর্বতের পাল্লাই বেশি ভারি। গত দেড়শ’ বছরে অসংখ্য মানুষ দাবি করেন যে, তারা নুহ নবীর জাহাজ খুজে পেয়েছেন। কিন্তু কেউই আজ পর্যন্ত উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বিজ্ঞানসম্মত কোনো প্রমাণ, ছবি বা আলামত এনে দেখাতে পারেনি কেউ। মাঝখান থেকে গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে আরো বেশি করে।
১৯৭৬ সালে হলিউডি সিনেমা ‘ইন সার্চ অব নোহাস আর্ক’ মুক্তি পায়। এটি মুক্তি পাওয়ার পর আবার পৃথিবীজুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, নুহ নবীর জাহাজের খোঁজ মিলেছে। গুজবের মূল উৎস হলো একটি ফটোগ্রাফ। হুজুগে মানুষরা সেটা নিয়েই ব্যাপক হইচই করতে থাকে। পরে অবশ্য দেখা যায়, ছবিটি একটি বিচিত্রদর্শন পাথর ছাড়া আর কিছু নয়। এরকম ঘটনা শুধু একবার নয়, অসংখ্যবার ঘটেছে। সামান্য সূত্র পেয়ে সেটাকে যাচাই না করেই মানুষ হুজুগে ভেসেছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই চলছে এই খোঁজার পালা। তবে আজ পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি এই রহস্যের। অসংখ্য অভিযাত্রী, পর্যটক আর প্রত্নতত্ত্ববিদের ধারণা, সেই নুহ নবীর জাহাজ আজো লুকিয়ে আছে আরারাত পর্বতের গহিন কোনো বরফের স্তরের আড়ালে। আর কে জানে কোন একদিন হয়ত সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সত্য উন্মোচিত হবে
সূত্রঃ ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন পত্রিকার সারাংশ
http://www.throneofgod.com/
http://en.wikipedia.org/wiki/Noah's_Ark
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন