নুহ নবীর কিস্তির খোজে

প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ও পৌরানিক কাহিনীতে বিভিন্ন স্থানগুলোকে খুজে বের করার প্রয়াস নিয়ে থাকেন। গ্রিক মহাকবি হোমারের ওডিসিতে এভাবে বর্নিত ট্রয় নগরী পূরাকীর্তি অভিযানের মাধ্যমে খুজে বের করা হয়েছে। পবিত্র কোরানে উল্লেখিত শেবার রানী বিলকিসের প্রসাদ কে এভাবে এক প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে ইথিওপিয়ার আকসুম নগরীতে খুজে পাওয়া গেছে। দাম্ভিক রাজা সাদ্দামের বেহেশত বলে কথিত ইরম নগরীর ধ্বংসাবাশেষ ও আবিস্কার করা হয়েছে।
কয়েক হাজার বছরের পূরানো কাহিনী পৃথিবী পাপে পরিপূর্ন। সৃষ্টিকর্তা সামান্য কিছু নির্বাচিত মানুষ ও পশুপাখি ছাড়া সব কিছু এক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ধ্বংস করে দেবেন। প্রায় সমস্ত ধর্ম কাহিনী আর অনেক পৌরানিকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আছে। চলুন দেখি ইসলাম ধর্মে কি বলে-
সূরা হুদ ৪২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত –
আয়াতে বলা হয়েছে, "পর্বত প্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এ (নৌকা) তাদের নিয়ে বয়ে চললো, নূহ তার পুত্রকে যে (তাদের ডাকে) পৃথক ছিল, ডেকে বললেন, হে বৎস আমাদের সঙ্গে আরোহন কর এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না।"
এবার সূরা হুদের ৪৪ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ "(আল্লাহর শাস্তি ও কাফেরদের ধ্বংসের পর) বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ তুমি ক্ষান্ত হও,এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো, নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হলো এবং বলা হলো ধ্বংসই সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের পরিণাম।"
বাইবেলের জেনেসিসে আছে নোহার কথা

9 ¶ These are the generations of Noah: Noah was a just man 2 Pet. 2.5 and perfect in his generations, and Noah walked with God.
10 And Noah begat three sons, Shem, Ham, and Japheth.
11 ¶ The earth also was corrupt before God; and the earth was filled with violence.
12 And God looked upon the earth, and, behold, it was corrupt; for all flesh had corrupted his way upon the earth.
13 And God said unto Noah, The end of all flesh is come before me; for the earth is filled with violence through them; and, behold, I will destroy them with the earth.
14 Make thee an ark of gopher wood; rooms shalt thou make in the ark, and shalt pitch it within and without with pitch.
15 And this is the fashion which thou shalt make it of: The length of the ark shall be three hundred cubits, the breadth of it fifty cubits, and the height of it thirty cubits.
16 A window shalt thou make to the ark, and in a cubit shalt thou finish it above; and the door of the ark shalt thou set in the side thereof; with lower, second, and third stories shalt thou make it.
রাশিয়ান গোয়েন্দা বিমান নিয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। গরম পড়েছে। সকালের সোনারোদে আরারাত পর্বতের চূড়ায় ঝকমক করছে বরফের স্তর। হঠাৎ কী যেন চোখে পড়তেই নড়েচড়ে বসলেন লেফটেনেন্ট। রুটিন চেকআপের জন্য বিমানটা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেলে সদর দফতরে রিপোর্ট করার কথা। কিন্তু আরারাত পর্বতে যা দেখলেন তাতে বিস্ময়ে তখনই খবর দেয়ার কথা মনেই পড়ল না তার। পাহাড়চূড়ায় আছে বিশাল এক হিমবাহ হ্রদ। সেখানেই পুরনো জাহাজের মতো কিছু একটা চোখে পড়ল তার। বিমান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যতটা সম্ভব কাছে থেকে সেটা দেখার চেষ্টা করলেন রস্কোভিতস্কি। সেটা ১৯১৬ সালের ঘটনা।

তবে খবরটা চাপা রইল না। ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে-কানাচে। সবার ধারণা, নুহ নবীর সেই বিখ্যাত জাহাজকে খুঁজে পেয়েছেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। যে জাহাজে চড়ে নুহ নবী ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ব্যস। দলে দলে মানুষ এসে হাজির হলো আরারাত পর্বতের গোড়ায়। পাহাড় তন্ন তন্ন করে তারা খুঁজে বের করল সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। শুরু হলো ছবি তোলা আর প্রমাণ সংগ্রহের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু সবকিছু করে ফেলার আগেই রাশিয়ায় শুরু হয়ে গেল বিপ্লব আর গৃহযুদ্ধ। রাশিয়া জুড়ে তখন দারুণ অস্থিরতা। বিপ্লবের উত্তেজনায় তখনকার মতো চাপা পড়ে যায় নুহ নবীর জাহাজের বিষয়টি। বিপ্লবের পর আবারো শুরু হয় খোঁজ।

১৯৫৩ সালে জেফারসন গ্রীন নামে এক এক প্রকৌশলী হেলিকপ্টারে চড়ে আরারত পাহাড়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় দেখতে পেলেন বড়সড় চৌকো আকৃতির এক বাক্স ঝুলে আছে খাড়া পাহাড়ের কিনারা ঘেষে। তার বেশির ভাগই বরফে আবৃত হয়ে আছে। আবারো লাইম লাইটে চলে আসে নূহ নবীর নৌকা। তিনি কিছু ছবি তুলে আনেন।

১৯৫৫ সালে এক ফরাসী পর্বতারোহী ফার্নান্স নাভারা আরারাত পাহাড়ে উঠতে গিয়ে বহু প্রাচীন কিছু কাঠের টুকরো পান। কালো রঙের ফসিল হয়ে যাওয়া সেই কাঠের টুকরো স্পেনের গবেষনাগারে C-14 টেষ্ট করে জানা যায় প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পূরানো
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্টের স্পেস কমিটির সদস্য ফ্রাঙ্ক মস জানালেন উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত আরারত পর্বত মালায় যে নৌকার আকৃতি দেখা যায় সম্ভবত ওটাই নূহ (অঃ) নৌকা।
তুরস্ক সরকারের নিরাপত্তার কড়াকড়ি আর রাশিয়ানদের হুমকি-ধমকিতেও খোঁজার গতি কমে না। এখন পর্যন্ত সেই জাহাজ নিয়ে কৌতূহল আর আগ্রহ বজায় আছে আগের মতোই। ধর্মগ্রন্থগুলোর যে জাহাজে চড়ে নুহ নবী মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেটি ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি করা বিশাল একটি জলযান।

শোনা যায়, কম করে হলেও এটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫০ ফুট ও প্রস্থে ৭৫ ফুট। ভেতরের ডেকসহ এটির উচ্চতা ছিল ৪৫ ফুট। বিংশ শতাব্দীর আগে নির্মিত সবচেয়ে বড় জলযান হিসেবে স্বীকৃত এই জলযান। এর নির্মাণকৌশল আর নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক। শোনা যায়, মহাপ্লাবনের শেষে আরারাত কিংবা জুদাই পর্বতের আশপাশে কোথাও নোঙ্গর ফেলেছিল সেই জাহাজ। তবে এদিক থেকে আরারাত পর্বতের পাল্লাই বেশি ভারি। গত দেড়শ’ বছরে অসংখ্য মানুষ দাবি করেন যে, তারা নুহ নবীর জাহাজ খুজে পেয়েছেন। কিন্তু কেউই আজ পর্যন্ত উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বিজ্ঞানসম্মত কোনো প্রমাণ, ছবি বা আলামত এনে দেখাতে পারেনি কেউ। মাঝখান থেকে গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে আরো বেশি করে।
১৯৭৬ সালে হলিউডি সিনেমা ‘ইন সার্চ অব নোহাস আর্ক’ মুক্তি পায়। এটি মুক্তি পাওয়ার পর আবার পৃথিবীজুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, নুহ নবীর জাহাজের খোঁজ মিলেছে। গুজবের মূল উৎস হলো একটি ফটোগ্রাফ। হুজুগে মানুষরা সেটা নিয়েই ব্যাপক হইচই করতে থাকে। পরে অবশ্য দেখা যায়, ছবিটি একটি বিচিত্রদর্শন পাথর ছাড়া আর কিছু নয়। এরকম ঘটনা শুধু একবার নয়, অসংখ্যবার ঘটেছে। সামান্য সূত্র পেয়ে সেটাকে যাচাই না করেই মানুষ হুজুগে ভেসেছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই চলছে এই খোঁজার পালা। তবে আজ পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি এই রহস্যের। অসংখ্য অভিযাত্রী, পর্যটক আর প্রত্নতত্ত্ববিদের ধারণা, সেই নুহ নবীর জাহাজ আজো লুকিয়ে আছে আরারাত পর্বতের গহিন কোনো বরফের স্তরের আড়ালে। আর কে জানে কোন একদিন হয়ত সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সত্য উন্মোচিত হবে
সূত্রঃ ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন পত্রিকার সারাংশ
http://www.throneofgod.com/
http://en.wikipedia.org/wiki/Noah's_Ark
ইয়াজুজ-মাজুজ কারা এবং কখন আবির্ভাব হবে
প্রথমে কুর-আন ও হাদিসে ইয়াজুজ-মাজুজের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
ইয়াজুজ-মাজুজ
কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে “ইয়াজুজ-মাজুজ”-এর উত্থান অন্যতম। কিন্ত আমাদের অনেকেই ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে জানা তো দূরে থাক,এদের নামই শোনেন নি! এ কারণেই খুব সংক্ষেপে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কিছু লেখা হল।
☞ ইয়াজূজ মাজূজ সম্প্রদায় আদম (আঃ)-এর বংশধর। তারা ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে ঈসা (আঃ)-এর সময় পৃথিবীতে উত্থিত হবে।
☞ শাসক যুলক্বারনাইন তাদেরকে এখন প্রাচীর দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন (সূরা কাহফ, আয়াত ৯২-৯৭)।
[এখানে একটা কথা বলে রাখি,অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে এটা মনে করেন যে যুলক্বারনাইন হচ্ছেন আলেকজান্ডার,এবং তিনি একজন নবী। প্রকৃতপক্ষে,এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, যুলক্বারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। আর প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী,যুলক্বারনাইন নবী ছিলেন না,ছিলেন এক সৎ ঈমানদার বাদশা। পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলক্বারনাইন বলা হয়।]
☞ ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে তারা সেদিন বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষদলটি এসে বলবে ‘হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল’ । তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না।
☞ এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,”দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব।” তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন।
☞ এসময় ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে । আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে।
( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫) ।
পরিচয়ঃ
ইয়াজুজ মাজুজ এরা তুরস্কের বংশোদ্ভুত দুটি জাতি। কুরআন মাজীদে এ জাতির বিস্তারিত পরিচয় দেয়া হয়নি। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে তাদের নাক চ্যাপ্টা, ছোট ছোট চোখ বিশিষ্ট। এশিয়ার উত্তর পুর্বাঞ্চলে অবশিত এ জাতির লোকেরা প্রাচীন কাল হতেই সভয় দেশ সমুহের উপর হামলা করে লুটতরাজ চালাত। মাঝে মাঝে এরা ইউরোপ ও এশিয়া উভয় দিকে সয়লাবের আকারে ধবংসের থাবা বিস্তার করতো।
বাইবেলের আদি পুস্তকে(১০ম আধ্যায়ে) তাদেরকে হযরত নুহ (আ:) এর পুএ ইয়াকেলের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিক গন ও একথাই মনে করেন রাশিয়া ও ঊওর চীনে এদের অবস্থান বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে অনুরুপ চরিত্রের কিছু উপজাতি রয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হুন ও সেথিন নামে পরিচিত।
তাছাডা একথাও জানা যায় তাদের আক্রমন থেকে আত্নরক্ষার জন্ন ককেম্পসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়ালের মাঝখানে প্রাচীর নির্মান করা হয়েছিল। ইসরাঈলী ঐতিহাসিক ইউসীফুল তাদেরকে সেথীন জাতি মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা কিষ্ণ সাগরের উওর ও পুর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। জিরোম এর বর্ণনামতে মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উওরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে।
ইয়াজূজ এবং মাজূজের উদ্ভব…
● ইয়াজূজ এবং মাজূজ হচ্ছে আদম সন্তানের মধ্যে দু-টি গোত্র, যেমনটি হাদিসে এবং বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ অস্বাভাবিক বেঁটে, আবার কিছু অস্বাভাবিক লম্বা। কিছু অনির্ভরযোগ্য কথাও প্রসিদ্ধ যে তাদের মাঝে বৃহৎ কর্ণবিশিষ্ট মানুষও আছে, এক কান মাটিতে বিছিয়ে এবং অপর কান গায়ে জড়িয়ে বিশ্রাম করে।
● বরং তারা হচ্ছে সাধারণ আদম সন্তান। বাদশা যুলকারনাইনের যুগে তারা অত্যধিক বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। অনিষ্টটা থেকে মানুষকে বাঁচাতে যুলকারনাইন তাদের প্রবেশ পথ বৃহৎ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন।
● নবী করীম (সা:) বলে গেছেন যে, ঈসা নবী অবতরণের পর তারা সেই প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ্র আদেশে ঈসা (আ:) মুমিনদেরকে নিয়ে তূর পর্বতে আশ্রয় নেবেন।
অতঃপর স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
ঐতিহাসিক সেই প্রাচীর নির্মাণ:
● যুলকারনাইনের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক বলেন- আবার সে পথ চতলে লাগল। অবশেষে যখন সে দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে এক জাতিকে পেল, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল: হে যুলকারনাইন! ইয়াজূজ ও মাজূজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। সে বলল: আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন সে বলল: তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন সে বলল: তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আনি তা এর উপর ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজূজ ও মাজূজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেগ করতেও সক্ষম হল না…[সূরা কাহফ, আয়াত ৯২-৯৭]
কে সে যুলকারনাইন?
● তিনি হচ্ছেন এক সৎ ইমানদার বাদশা। নবী ছিলেন না (প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী), পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলকারনাইন বলা হয়। অনেকে আলেকজান্ডারকে যুলকারনাইন আখ্যা দেন, যা সম্পূর্ণ ভুল। কারন, যুলকারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। তাছাড়া তাদের দুজনের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বৎসরের ব্যবধান। (আল্লাহ্ই ভাল জানেন)
● বিশ্ব ভ্রমণকালে তিনি তুর্কী ভূমিতে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সন্নিকটে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছেছিলেন। এখানে দুটি পাহাড় বলতে ইয়াজূজ-মাজূজের উৎপত্তিস্থল উদ্দেশ্য, যেখান দিয়ে এসে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত, ফসলাদি বিনষ্ট করত। তুর্কীরা যুলকারনাইন সমীপে নির্ধারিত ট্যাক্সের বিনিময়ে একটি প্রাচীর নির্মাণের আবেদন জানাল। কিন্তু বাদশা যুলকারনাইন পার্থিব তুচ্ছ বিনিময়ের পরিবর্তে আল্লাহ্র প্রতিদানকে প্রাধান্য দিলেন। বললেন- ঠিক আছে! তোমরা আমাকে সহায়তা করো! অতঃপর বাদশা ও সাধারণের যৌথ পরিশ্রমে একটি সুদৃঢ় লৌহ প্রাচীর নির্মিত হল। ইয়াজূজ-মাজূজ আর প্রাচীর ভেঙে আসতে পারেনি।
ইয়াজূজ-মাজূজের ধর্ম কি? তাদের কাছে কি শেষনবীর দাওয়াত পৌঁছেছে?
● পূর্বেই বলা হয়েছে যে, তারা হচ্ছে আদম সন্তানেরই এক সম্প্রদায়। হাফেয ইবনে হাজার (রহ:) এর মতে- তারা নূহ (আ:) এর পুত্র ইয়াফিছের পরবর্তী বংশধর।
● ইমরান বিন হুছাইন (রা:) থেকে বর্ণিত, কোন এক ভ্রমণে আমরা নবীজীর সাথে ছিলাম। সাথীগণ বাহন নিয়ে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। নবীজী উচ্চকণ্ঠে পাঠ করলেন- হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্য-ধাত্রী তার দুধের শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুত: আল্লাহ্র আযাব বড় কঠিন…[সূরা হাজ্ব, আয়াত:১-২] নবীজীর উচ্চবাচ্য শুনে সাহাবিগণ একত্রিত হতে লাগলেন, সবাই জড়ো হলে বলতে লাগলেন- তোমরা কি জান-আজ কোন দিবস? আজ হচ্ছে সেই দিবস, যে দিবসে আদমকে লক্ষ্য করে আল্লাহ্ বললেন: জাহান্নাম বাসী বের কর! আদম বলবে: জাহান্নাম বাসী কে হে আল্লাহ্…!?আল্লাহ্ বলবেন- প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে আর একজন শুধু জান্নাতে!! নবীজীর কথা শুনে সাহাবীদের চেহারায় ভীতির ছাপ ফুটে উঠল। তা দেখে নবীজী বলতে লাগলেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! সেদিন তোমাদের সাথে ধ্বংস-শীল আদম সন্তান, ইয়াজূজ-মাজূজ এবং ইবলিস সন্তানেরাও থাকবে, যারা সবসময় বাড়তে থাকে (অর্থাৎ ওদের থেকে ৯৯৯ জন জাহান্নামে, আর তোমাদের থেকে একজন জান্নাতে), সবাই তখন আনন্দ ও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল। আরো বললেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! মানুষের মাঝে তোমরা সেদিন উটের গায়ে ক্ষুদ্র চিহ্ন বা জন্তুর বাহুতে সংখ্যা চিহ্ন সদৃশ হবে…[তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ]
● অর্থাৎ হাশরের ময়দানে ইয়াজূজ-মাজূজ, পর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি এবং ইবলিস বংশধরদের উপস্থিতিতে তোমাদেরকে মুষ্টিমেয় মনে হবে। ঠিক উটের গলায় ক্ষুদ্র চিহ্ন আঁকলে যেমন ক্ষুদ্র দেখা যায়, হাশরের ময়দানেও তোমাদের তেমন দেখাবে।
ইয়াজূজ-মাজূজের সংখ্যাধিক্য:
● আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা:) বলেন- ইয়াজূজ-মাজূজ আদম সন্তানেরই একটি সম্প্রদায়। তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলবে। তাদের একজন মারা যাওয়ার আগে এক হাজার বা এর চেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে যায়। তাদের পেছনে তিনটি জাতি আছে-তাউল, তারিছ এবং মাস্ক…[তাবারানী]
দৈহিক গঠন:
● খালেদ বিন আব্দুল্লাহ্ আপন খালা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- একদা নবী করীম (সা:) বিচ্ছু দংশনের ফলে মাথায় ব্যান্ডেজ বাধাবস্থায় ছিলেন। বললেন- তোমরা তো মনে কর যে, তোমাদের কোন শত্রু নেই! (অবশ্যই নয়; বরং শত্রু আছে এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে) তোমরা যদ্ধু করতে থাকবে। অবশেষে ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব হবে। প্রশস্ত চেহারা, ক্ষুদ্র চোখ, কৃষ্ণ চুলে আবছা রক্তিম। প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে তারা দ্রুত ছুটে আসবে। মনে হবে, তাদের চেহারা সুপরিসর বর্ম…[মুসনাদে আহমদ, তাবারানী]
অর্থাৎ মাংসলতা ও স্থূলতার ফলে তাদের চেহারা বর্ম সদৃশ দেখাবে।
যে ভাবে প্রাচীর ভেঙে যাবে:
● যুলকারনাইনের নির্মিত সুদৃঢ় প্রাচীরের দরুন দীর্ঘকাল তারা পৃথিবীতে আসতে পারেনি। প্রাচীরের ওপারে অবশ্যই নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা জীবন যাপন করছে। তবে আদ্যাবধি তারা সেই প্রাচীর ভাঙতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
● আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, প্রাচীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী করীম (সা:) বলেন- অতঃপর প্রতিদিন তারা প্রাচীর ছেদন কার্যে লিপ্ত হয়। ছিদ্র করতে করতে যখন পুরোটা উন্মোচনের উপক্রম হয়, তখনই তাদের একজন বলে, আজ তো অনেক করলাম, চল! বাকীটা আগামীকাল করব! পরদিন আল্লাহ্ পাক সেই প্রাচীরকে পূর্বের থেকেও শক্ত ও মজবুত রূপে পূর্ণ করে দেন। অতঃপর যখন সেই সময় আসবে এবং আল্লাহ্ পাক তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেবেন, তখন তাদের একজন বলে উঠবে, আজ চল! আল্লাহ্ চাহেন তো আগামীকাল পূর্ণ খোদাই করে ফেলব! পরদিন পূর্ণ খোদাই করে তারা প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। মানুষের ঘরবাড়ী বিনষ্ট করবে, সমুদ্রের পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ দূরে দূরান্তে পলায়ন করবে। অতঃপর আকাশের দিকে তারা তীর ছুড়বে, তীর রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে…[তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম]
কুরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর ঘটনা ও তার শিক্ষা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তাআলা যে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তার প্রত্যেকটি ঘটনাতেই আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেকেই সেই ঘটনাগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেন, যাতে শিক্ষণীয় বস্তুগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে না। বক্তাগণ এ সমস্ত ঘটনা বলে শ্রোতাদেরকে কখনও হাসান আবার কখনও কাঁদান ঠিকই, কিন্তু যেই উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ্ ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছেন, সেই সুমহান উদ্দেশ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টই থেকে যায়। কুরআনে বর্ণিত আসহাফে কাহাফ বা গুহাবাসীর আশ্চর্যজনক ঘটনাও কুরআনের শিক্ষণীয় ঘটনাসমূহের অন্যতম একটি ঘটনা। আসুন আমরা তাফসীরে ইকনে কাছীর ও কিসাসুল কুরআনের আলোকে এই শিক্ষণীয় ঘটনা এবং তার শিক্ষণীয় বিষয়গুলো জেনে নেই।
সেই যুগে কোন এক ঈদের দিন লোকগণ মূর্তি পূজার অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বের হল। এতে তারা তাদের মূর্তিগুলোর নৈকট্য লাভের জন্য পশু যবাই বা অন্যান্য যা করার তাই করবে। কিন্তু তাদের সভ্রান্ত ও সম্মানিত বংশের একজন যুবক মূর্তি পূজার এই মহড়া কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা যে সমস্ত কল্পিত মাবুদের উপাসনা করছিল, তা দেখে তিনি বিবেকের কাছে থমকে দাঁড়ালেন। সন্দেহ তাঁর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাঁর চিন্তা ও চেতনায় এক নতুন গতির সঞ্চার হল। তিনি জন সমাবেশ ত্যাগ করে চুপ করে বের হয়ে গেলেন। একটি গাছের নীচে গিয়ে পেরেশান হয়ে বসে রইলেন।
কিছুক্ষণ পর তার মতই আরেকজন যুবক এসে তার সাথে বসে পড়লেন। তার মনেও একই সন্দেহ। এক এক করে সাতজন যুবক এসে একত্রিত হলেন। সকলের মনে প্রশ্ন একটাই। নিজ হাতে গড়া কাঠের ও পাথরের মূর্তি কি করে আমাদের মাবুদ হতে পারে? কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষমতাই বা কোথায় পেল তারা? যিনি এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এই আকাশ-বাতাস তৈরী করেছেন, যিনি আমাদের জীবন ও মরণের একমাত্র মালিক, তাঁকে বাদ দিয়ে এগুলোর এবাদত কি করে সম্ভব?
এই সাতজনের মধ্যে কোন প্রকার রক্তের সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঈমানের বন্ধনে তাদের একজন অন্যজনের সাথে আটকে গেলেন। তারা সকলেই এক বাক্যে পরস্পরের নিকট জাতির লোকদের মূর্তি পূজা ও শির্কের প্রতি মনের সন্দেহের কথা প্রকাশ করলেন। অতঃপর তারা মহা বিশ্বের মাঝে তাদের প্রখর দৃষ্টি ঘুরালেন। এতে তাদের অন্তরসমূহ তাওহীদের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল এবং আল্লাহর মনোনিত দ্বীনের সন্ধান পেয়ে তাদের আত্মা এক অনাবিল প্রশান্তি লাভ করল।
তারা সকলেই ঈমান গোপন রাখার উপর একমত হলেন। কারণ তাদের বাদশাহ ছিল মূর্তি পূজক, মুশরিক এবং শির্কের উপর প্রজাদেরকে বাধ্যকারী।
তারা সমাজের অন্যান্য লোকদের সাথেই বাস করতে থাকলেন। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেই যখন একাকী হন তখন আল্লাহর এবাদতের দিকে মনোনিবেশ করেন। কোন এক রাতে তারা যখন একত্রি হলেন, তখন তাদের একজন নীচু আওয়াজে এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে বললেনঃ হে আমার বন্ধুগণ! গতকাল আমি একটি খবর শুনেছি। এটি যদি সত্য হয়, (আমার ধারণাও তাই) তাহলে অচিরেই আমাদেরকে আমাদের দ্বীন হতে ফিরিয়ে রাখা হতে পারে অথবা আমাদের জীবন নাশ করা হতে পারে। আমি শুনলামঃ আমাদের ব্যাপারটি এখন আর বাদশাহর কাছে গোপন নয়, আমাদের দ্বীন ও আকীদাহর বিষয়টি এখন তার কাছে অস্পষ্ট নয়। যেই দ্বীনকে আমরা হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছি এবং যা আমাদের চিন্তা-চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে, তা এখন বিপন্ন হওয়ার পথে। সুতরাং তোমরা চিন্তা কর এবং তোমাদের সিদ্বান্ত তোমরাই গ্রহণ কর।
দ্বিতীয়জন বললেনঃ খবরটি আমিও শুনেছি। তবে তা মুনাফেক এবং অজ্ঞদের অপপ্রচার মনে করে উড়িয়ে দিয়েছি।
পরক্ষণেই খবরটির সত্যতা প্রমাণিত হল। তারা বললেনঃ আমরা আমাদের দ্বীনের উপর অবিচল থাকবো। যে বিপদই আসুক না কেন, তা মাথা পেতে মেনে নিবো। আল্লাহর সত্য দ্বীনকে জানার পর কোনভাবেই পূর্বের সেই মূর্তি পূজার দিকে ফেরত যাবো না।
গুজব এখন সত্যে পরিণত হল। বাদশাহ তাদের খবরটি জেনে ফেলল। তাদেরকে ঘর থেকে বের করে বাদশাহর দরবারে হাজির করা হল।
বাদশাহ বললঃ তোমরা তোমাদের ব্যাপারটি গোপন রাখতে চেষ্টা করেছ। কিন্তু সফল হতে পার নি। আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা বাদশাহ এবং তার প্রজাদের দ্বীন ছেড়ে দিয়েছ। তোমরা এমন এক নতুন দ্বীনে প্রবেশ করেছ, যে সম্পর্কে আমি জানি না। কোথা থেকে তা তোমাদের কাছে আগমণ করেছে? আমি তোমাদেরকে কখনই এভাবে ছেড়ে দিবো না। আমি জানি তোমরা সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। তাই অন্যরা তোমাদের কারণে বিভ্রান্ত হতে পারে। এমন আশঙ্কা যদি না থাকত তাহলে তোমাদেরকে বাঁধা প্রদান করতাম না।
যাই হোক আমি তোমাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করতে চাচ্ছি না। তোমরা চিন্তা কর। হয় তোমরা আমার দ্বীনে ফেরত আসবে অন্যথায় তোমাদের মাথাগুলো দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
তাদের অন্তরগুলোকে আল্লাহ মজবুত করে দিলেন। ঈমানকে শক্তিশালী করে দিলেন। তারা বললেনঃ হে বাদশাহ! আমরা এই দ্বীনে কারও অন্ধ অনুসরণ করে প্রবেশ করি নি, বাধ্য হয়েও নয় এবং অজ্ঞাতসারেও নয়। আমাদের সুস্থ বিবেক ও ফিতরাত আমাদেরকে ডাক দিয়েছে। আমরা সেই ডাকে সাড়া দিয়েছি। বিবেক আমাদেরকে আলোকিত করেছে। তার আলোতেই আমরা চলছি। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নেই। আমরা তাঁকে ছাড়া আর কাউকেই ডাকবো না। আর আমাদের জাতির লোকেরা অন্ধ হয়ে অন্যের তাকলীদ করে মূর্তি পূজা করছে, যে ব্যাপারে তাদের কাছে কোন দলীল-প্রমাণ নেই। এই হল আমাদের শেষ কথা। এখন আপনার যা খুশী করতে পারেন।
এরপর বাদশাহ বললঃ এবার যাও। আগামীকাল অবশ্যই আসবে। আমি তোমাদের ব্যাপারে ফয়সালা প্রদান করবো।
তারা ফিরে এসে পরামর্শ করতে লাগলেন এবং প্রত্যেকেই স্বীয় মতের চাকা ঘুরাতে লাগলেন। তাদের একজন বললেনঃ বাদশাহ যেহেতু আমাদের ব্যাপারটি জেনেই ফেলেছে, তাই তার ধমকি ও হুমকির মধ্যে থেকে আমাদের কোন লাভ নেই। আমরা ঐ গুহার দিকে দ্বীন নিয়ে পালিয়ে যাবো। যদিও তা হবে এই প্রশস্ত দেশের তুলনায় খুব অন্ধকার ও সংকীর্ণ। কিন্তু আমরা সেখানে প্রশস্ত মনে এক আল্লাহর এবাদত করতে পারবো, যা আমরা এই বিশাল রাজ্যে করতে করতে পারছি না। এমন দেশে আমাদের বসবাস করাতে কোন কল্যাণ নেই, যেখানে আমরা নিরাপদে আমাদের আকীদাহ-বিশ্বাস অনুযায়ী দ্বীন পালন করতে পারি না এবং এমন ভূমিতে আমাদের বসবাস করা ঠিক হবে না, যেখানে আমাদের সঠিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অন্য একটি বাতিল মত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সুতরাং সকলেই এই কথায় একমত হয়ে গেলেন। তারা সফর সামগ্রী তৈরী করে নিজ দেশ ছেড়ে এক অজানা পথের উদ্দেশ্যে দ্বীন নিয়ে হিজরত শুরু করলেন। পথে একটি কুকুর তাদের সাথী হয়ে গেল, একই পথে চলতে লাগল, তাদের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আটকে গেল এবং তাদের প্রহরী হওয়ার দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিজেই মনোনিত করল। ভালকে ভালবাসলে এবং সৎ লোকের সাহচর্যে গেলে আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়, এই প্রাণীটি হয়তবা তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল।
পথ চলতে চলতে এক সময় তারা গুহায় পৌছে গেলেন। হয়তবা সেখানে তারা আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে ফল-ফলাদি পেয়ে গেলেন এবং ঝর্ণার পরিচ্ছন্ন মিষ্টি পানি পান করলেন। দীর্ঘ পথ চলার পর সফরের ক্লান্তি দূর করার জন্য পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে সেখানে তারা সামান্য বিশ্রামের নিয়তে গুহার মধ্যকার যমীনে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই হালকা ঘুম অনুভব করলেন এবং সেই হালকা ঘুমের পথ ধরেই গভীর নিদ্রা চলে আসল।
পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে বাদশাহর দরবারে হাজির না হওয়াতে তার লোকেরা তাদের অনুসন্ধানে বের হল। এমন কি তারা সেই গুহার দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। কিন্তু হিজরতের পথে মক্কার মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর (রাঃ)এর সন্ধানে বের হয়ে গারে ছাওর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েও যেভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল আল্লাহ তাআলা সেভাবেই তাদেরকে অন্ধ করে দিলেন।
দিনের পর আসে রাত। রাতের পর দিন। পার হয়ে গেল বছরের পর বছর। যুবকগণ শুয়ে আছেন। গভীর নিদ্রা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে আছে। বাইরের কর্ম ব্যস্ত জীবনের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, বিজলির গর্জন, বাতাসের প্রচন্ডতা এবং পৃথিবীর কোন ঘটনাই তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে নি। সূর্য উদিত হওয়ার সময় ডান পাশে হেলে গিয়ে গুহার ছিদ্র দিয়ে সামান্য আলো প্রবেশ করে এবং আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে সামান্য আলো ও তাপ প্রদান করে। কিন্তু সূর্যের প্রখর উত্তাপ তাতে প্রবেশ করে না। আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের শরীরকে হেফাজতের জন্য অস্ত যাওয়ার সময়ও সূর্য একটু বাম দিকে হেলে যায়। কুকুরটি তার দুই বাহু প্রসারিত করে বীরের মত প্রহরীর কাজে গুহার বাইরে অবস্থানরত।
তারা সেখানে মাঝে মাঝে ডানে বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করছেন। কে আছে এমন যে এই দৃশ্য দেখে ভয় পাবে না?
গভীর নিদ্রায় তিনশ নয় বছর পার হয়ে গেল। এবার তারা ক্ষুধা ও পিপাসায় দুর্বল শরীর নিয়ে জাগ্রত হলেন। তারা ভাবলেন সময় বেশী অতিক্রম হয় নি এবং ইতিহাসের চাকা গুহার মুখেই থমকে রয়েছে।
তাদের একজন বললেনঃ হে আমার বন্ধগণ! আমার মনে হয় এখানে আমরা দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে পার করেছি। তোমাদের মতামত কি?
অন্যজন বললেনঃ আমার মনে হয় পূর্ণ একদিন আমরা নিদ্রিত ছিলাম। কারণ যে ধরণের ক্ষুধা ও পিপাসা আমরা অনুভব করছি, তাতে তাই মনে হয়।
তৃতীয়জন বললেনঃ সকালে ঘুমিয়েছি। এই দেখো সূর্য এখনও ডুবে যায় নি। আমার মনে হয় একটি দিবসের কিয়দাংশই আমরা নিদ্রায় অতিক্রম করেছি।
চতুর্থজন বললেনঃ ছাড়ো এ সব মতভেদ। আল্লাহই ভাল জানেন, আমরা কতকাল এখানে ঘুমিয়েছি। মূল কথা হচ্ছে আমার প্রচুর ক্ষুধা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে কয়েক দিন যাবৎ না খেয়ে আছি। আমাদের একজনের উচিত এখনই শহরে গিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করে নিয়ে আসুক। তবে তাকে অবশ্যই সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ লোকেরা যদি আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে ফেলে তবে তারা আমাদেরকে হত্যা করতে পারে কিংবা আমাদেরকে ফিতনায় ফেলে দ্বীন পালন থেকে বিরত রাখতে পারে। তাকে আরেকটি বিষয়ে সাবধান হতে হবে। কোনভাবেই যেন হারাম খাদ্য ক্রয় করা না হয়। সে জন্য সে যাচাই-বাছাই করে হালাল খাদ্যটিই ক্রয় করবে।
তাদের একজন সাবধান ও পূর্ণ সতর্কতার সাথে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় শহরে প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন কোন কিছুই আর আগের মত নেই। ঘরবাড়িগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। পুরাতন পরিত্যাক্ত ঘরের স্থলে বিশাল প্রাসাদ শোভা পাচ্ছে। আগের রাজপ্রাসাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি এখন যে সমস্ত চেহারা দেখছেন সেগুলো পরিচিত কোন লোকের চেহারা নয়। নদীর শ্রোত আগের মতই চলছে বয়ে, পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে ঘরবাড়ি ও বন-বনানী ঠিকই আছে। শুধুন নেই আগের মানুষগুলো।
তার দৃষ্টি বিচলিত হল, এদিক সেদিক চোখ ঘুরানোতে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করতে লাগল এবং তার চলার ভঙ্গিতে মানুষের সন্দেহ দানা বেঁধে উঠল। পরিশেষে লোকেরা তাকে ঘিরে ধরল।
উপস্থিত লোকদের একজন তাকে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি এখানে অন্য দেশ থেকে এসেছেন? এত চিন্তা করছেন কি নিয়ে? অনুসন্ধানই বা করছেন কী?
তিনি বললেনঃ আমি এখানে অপরিচিত কেউ নই। আমি কিছু খাদ্য ক্রয় করতে চাই। কিন্তু কোথায় তা বিক্রি হচ্ছে আমি তা জানি না। একজন লোক তার হাত ধরে খাদ্যের দোকানে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে তিনি রোপার তৈরী কয়েকটি দিরহাম বের করলেন। দোকানের মালিক দিরহামগুলো হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেনঃ তা তিনশ বছরের অধিক সময় পূর্বে নির্মিত হয়েছে। সে ভাবল এই ব্যক্তি হয়ত কোন গুপ্তধন পেয়েছেন। সম্ভবতঃ এই দিরহামগুলো ছাড়াও তার কাছে বিপুল পরিমাণ দিরহাম রয়েছে। দোকানের মালিক বাজারের লোকদেরকে ডেকে একত্রিত করল।
এবার গুহাবাসী লোকটি বললেনঃ হে লোক সকল! দেখুনঃ আপনার যা ভাবছেন, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। এই মূদ্রাগুলো লুকায়িত অসংখ্য সম্পদের কোন অংশ নয়। গতকাল মানুষের সাথে কোন এক লেনদেনের সময় তা আমার হস্তগত হয়েছে। আর এই তো আজ আমি তা দিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করতে চাচ্ছি। আপনারা তাতে এত আশ্চর্যবোধ করছেন কেন? এর কোন কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আর কেনই বা সন্দেহের উপর নির্ভর করে আমার বিরুদ্ধে গুপ্তধন পাওয়ার এবং তা লুকিয়ে রাখার অপবাদ দিচ্ছেন?
এই কথা বলে তাদের ব্যাপারটি মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি স্থান ত্যাগ করতে চাইলেন। কিন্তু লোকেরা কিছুতেই তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হল না। ভিড় ভেঙ্গে দিয়ে একাকী তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে লাগল। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে তারা যখন জানতে পারল যে, তিনি হচ্ছেন তিন শত নয় বছর পূর্বে জালেম ও কাফের বাদশাহর পাকড়াও থেকে পলায়নকারী সম্ভ্রান্ত বংশের সাত জন যুবকের একজন তখন তারা আরও আশ্চার্যান্বিত হল। তারা আরও জানতে পারল যে, তারা হলেন ঐ সমস্ত যুবক যাদের তালাশে বাদশাহ সকল প্রচেষ্টাই করেছিল, কিন্তু তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। যুবকটি এবার আরও শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। কারণ এখন লোকেরা তাদের ব্যাপারটি জেনে ফেলেছে। তাই তিনি নিজরে ও তাঁর সাথীদের জীবন নাশের ভয়ে পালাতে উদ্যোত হলেন।
লোকদের মধ্যে হতে একজন বললঃ হে ভাই! তুমি ভয় করো না। তুমি যেই জালেম বাদশাহর ভয় করছ, সে তো প্রায় তিনশ বছর আগেই ধ্বংস হয়েছে। এখন যিনি এই রাজ্যের বাদশাহ তিনি আপনি ও আপনার সাথীদের মতই একজন মুমিন বান্দা। এবার বলুনঃ আপনার অন্যান্য সাথীগণ কোথায়?
যুবকটি এবার আসল ঘটনা জানতে পারলেন। ইতিহাসের সেই দীর্ঘ দূরত্বও তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন, যা তাকে মানব সমাজ থেকে আলাদা করে রেখেছে। তিনি বুঝতে পারলেনঃ এখন তিনি মানুষের মাঝে চলমান একটি ছায়া ব্যতীত আর কিছুই নন। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমাকে গুহার অভ্যন্তরে বন্ধুদের কাছে যেতে দাও। আমি তাদেরকে আমার ও আপনাদের অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেব। তারা দীর্ঘক্ষণ যাবৎ আমার অপেক্ষায় আছেন। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তারা আমার ব্যাপারে চিন্তিত আছেন।
তখনকার বাদশাহও তাদের খবরটি জেনে ফেললেন। তিনি গুহাবাসীদের সাথে সাক্ষাত করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন এবং দ্রুত গুহার দিকে চলে আসলেন। তিনি তাদেরকে উজ্জল চেহারায় জীবিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাদের সাথে মুসাফাহা ও আলিঙ্গন করলেন। তিনি তাদেরকে রাজপ্রাসাদে আহবান জানালেন এবং তথায় স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রন জানালেন।
তারা সাফ জানিয়ে দিলেনঃ নতুনভাবে জীবন যাপনে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। আমাদের ঘরবাড়িগুলো বিলীন হয়ে গেছে, পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্তদির কেউ জীবিত নেই এবং আমাদের মাঝে এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনের মাঝে দীর্ঘ দিন যাবৎ কোন যোগসূত্রও নেই। সুতরাং এই পার্থিব জীবনের দিকে ফিরে গিয়ে আর লাভ কি?
অতঃপর তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আবেদন করলেন, তাঁর কাছে ফেরত যাওয়াকেই পছন্দ করলেন এবং তাঁর প্রশস্ত রহমত দ্বারা তাদেরকে ঢেকে নিতে প্রার্থনা করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মত্যূর কোলে ঢলে পড়লেন। দেহ থেকে তাদের প্রাণ চির দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
এই ঘটনায় যে সমস্ত শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছেঃ
১) তাওহীদকে মেনে নেওয়া মানুষের ফিতরাতি তথা সৃষ্টিগত স্বভাব। অর্থাৎ কোন মানুষকে যদি তার স্বভাজাত ধর্মের উপর ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাইরের কোন গোমরাহ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাকে বিভ্রান্ত না করে, তাহলে সে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিবে, তারই এবাদত করবে এবং তাঁর এবাদতে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। যেমনটি হয়েছেলি ঘটনায় বর্ণিত যুবকদের ক্ষেত্রে।
২) পৃথিবীতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় যুবকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩) মূর্তি পূঁজা, অলী-আওলীয়াদের পূঁজা এবং শির্কের পক্ষে কোন দলীল নেই।
৪) প্রয়োজনে সত্য গোপন করা জায়েয আছে। কিন্তু তা সকল সময়ের জন্য নয়।
৫) সাহসের সাথে তাওহীদের বাণী প্রকাশ্যে প্রচার করা জরুরী।
৬) নিজ দেশে দ্বীন পালন করতে গিয়ে ফিতনার ভয় থাকলে দ্বীন নিয়ে পলায়ন করা আবশ্যক।
৭) আসহাবে কাহাফের ঘটনা আল্লাহর বিশেষ একটি বড় নিদর্শন। তবে তার চেয়েও বড় নিদর্শন হচ্ছে, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্যের সৃষ্টি এবং দিবা রাত্রির আগমণ ও প্রস্থান।
৮) বিপদাপদে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তাঁর দয়া কামনা করা জরুরী।
৯) কোন মতবাদ, মাজহাব ও আমল গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কারও অন্ধ অনুসরণ না করে দলীল অনুসন্ধান করা জরুরী।
১০) আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের খেদমতের জন্য বড় বড় মাখলুককে বাধ্য করেন।
১১) একজন দাঈ প্রয়োজনে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। বিশেষ করে যখন তাঁর পিছনে শত্রুরা ষড়যন্ত্র শুরু করে।
১২) সুখে-দুঃখে হালাল রুজী অনুসন্ধান করা জরুরী।
১৩) বিনা চিন্তা ও গবেষণায় কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো পাঠ করা উচিত নয়।
১৪) বিনা প্রয়োজনে মতভেদ করা অর্থহীন। যেমন গুহাবাসীদের নাম, কুকুরটির নাম ও তার রং সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে কোন লাভ নেই।
১৫) ভবিষ্যতে কোন কাজ করতে ইচ্ছা করলে প্রথমে ইনশা-আল্লাহ্ বলতে হেব।
১৬) প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্যের উপর অবিচল থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।
১৭) আসহাবে কাহাফের স্থান ও কাল কুরআন ও সহীহ হাদীছে উল্লেখ করা হয় নি। সুতরাং তা খুঁজে বেড়ানোতে আমাদের কোন লাভ নেই। ঘটনাটি ঐ প্রকার গায়েবের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে জানিয়েছেন। তবে তার স্থান ও কাল আমরা জানতে পারি নি।
১৮) নবী সাল্লাল্লাহু গায়েবের সকল খবর জানতেন না। যদি জানতেন, তাহলে অহীর অপেক্ষায় না থেকে প্রশ্ন করার সাথে সাথেই তাদেরকে ঘটনাটি বলে দিতেন।
১৯) আসহাবে কাহাফগণ যে গুহায় অবস্থান করেছিলেন তাও গায়েবের অন্তর্ভূক্ত। এর ঠিকানা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। কেউ যদি এর স্থান নির্দিষ্ট করে বলে সে আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনাকারীর অন্তর্ভূক্ত হবে।
২০) কারামতে আওলীয়া সত্য। তাতে বিশ্বাস করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহর অন্তর্ভূক্ত।
২১) তাওহীদ ও শির্কের মধ্যে পার্থক্য করার যোগ্যতা অর্জন করা জরুরী। অন্যথায় তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব নয়।
২২) তিন শত নয় বছর পর তাদেরকে জীবিত করা এটাই প্রমাণ করে যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য, কিয়ামত সত্য। এতে কোন সন্দেহ নেই।
২৩) রূহ এবং দেহ উভয়েরই পুনরুত্থান হবে। কেননা আসহাবে কাহাফগণ এভাবেই জীবিত হয়েছিলেন।
২৪) রক্তের সম্পর্কের চেয়ে ঈমানের সম্পর্ক অধিক মজবুত হওয়া আবশ্যক। ঘটনায় বর্ণিত যুবকদের মধ্যে রক্তের কোন সম্পর্ক না থাকলেও ঈমান ও তাওহীদের বন্ধনে তারা আবদ্ধ হয়ে একই পথের পথিক হয়ে যান।
২৫) হেদায়াত আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দার প্রতি বিরাট একটি নেয়ামত। বান্দার উচিত সর্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে হেদায়াত প্রার্থনা করা।
২৬) ঘরের মধ্যে কুকুর রাখা নিষিদ্ধ। তাই কুকুরটিকে গুহার বাইরে রাখা হয়েছিল।
২৭) ভাল লোকের সঙ্গে থাকলে ভাল বলে হওয়া যায় এবং ভাল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যায়। কুকুরটি তাদের সাথে থাকার কারণে কুরআনে তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। অপর পক্ষে অসৎ লোকের সঙ্গে থাকলে অসৎ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিরাপদ নয়।
২৮) কবরের উপর মসজিদ বা গম্বুজ নির্মাণ করা আমাদের শরীয়তে নিষিদ্ধ।
২৯) বাতিল পন্থীরা সন্দেহ এবং অনুমানের অনুসরণ করে থাকে। সঠিক কোন দলীল তাদের হাতে নেই।
৩০) বয়স বৃদ্ধি হলে এবং অভিজ্ঞতা দীর্ঘ হলেই মানুষ জ্ঞানী হয়ে যায় না। এই যুবকগণ বয়সে কম হলেও তারা সত্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। অথচ সেই জাতির মধ্যে অসংখ্য বয়স্ক ও অভিজ্ঞ লোক থাকা সত্ত্বেও সঠিক পথের সন্ধান পায় নি।
৩১) এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে সূর্য চলমান; স্থির নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডানদিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়।
৩২) প্রহরী হিসেবে কুকুর প্রতিপালন করা জায়েয আছে।
৩৩) কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে তা আল্লাহর দিকে সোপর্দ করে বলতে হবে আল্লাহই ভাল জানেন।
৩৪) আল্লাহ কখনও দ্বীনের দাঈদের ঈমানী শক্তি পরীক্ষা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদেরকে শক্তিশালী করে দেন। তখন দাঈদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা।
৩৫) তারা সংখ্যায় ছিলেন সাত জন। কারণ আল্লাহ তাআলা প্রথম দু’টি সংখ্যার প্রতিবাদ করে তৃতীয়টির ক্ষেত্রে কিছুই বলেন নি। এতে বুঝা গেল শেষ সংখ্যাটিই সঠিক।
৩৬) যে ব্যক্তি ফতোয়া দেয়ার যোগ্য নয়, তার কাছে ফতোয়া চাওয়া ঠিক নয়।
প্রিয় বলগারদের কাছে আমার আবেদন হল আপনাদের দৃষ্টিতে আরও কোন শিক্ষণীয় বিষয় থাকলে মন্তব্যের ঘরে উল্লেখ করবেন। আমি পরে মূল পোস্টে যোগ করে দিবো।
খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত
খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ-
মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রেখে লোকেরা যখন কাঁধে বহন করে নিয়ে যায় তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে,(আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল,আমাকে এগিয়ে নিয়ে চল) , আর সে নেককার যদি না হয় তাহলে সে বলতে থাকে (হায় আফসোস,হায় আফসোস) এটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? মানুষ ও জ্বীন ব্যতিত সব কিছুই তার আওয়াজ শুনতে পায়। মানুষ তা শুনতে পেলে অবশ্যই বেহুশ হয়ে যেত। [সহীহ বুখারী/৯৪৩]
ইয়া রব্বুল আলামিন, ইয়া আল্লাহ, দয়াকরে তুমি আমাদেরকে ঈমানের সাথে, আমলের সাথে মৃত্যু দান করিও। আমীন। সুম্মা আমীন।

বিশ্বাস- Faith (Islamic post)
‘বিশ্বাস’ শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য।এটি মানুষের একট সহজাত বৈশিষ্ট।ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মানুষের এই বৈশিষ্টটি যেমন অতীব প্রয়োজনীয়,তেমনি ধর্মীয়অনুভুতিতেও তা অত্যান্ত জরুরী।নানা উপায়ে মনুষের মধ্যে এই গুনটি উন্মেষ ঘটে;যেমন দীর্ঘদিনের জানাশোনায় একে অপরের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে উঠে।আবার কখনো তাৎক্ষনিক ভাবেও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়,সেই বিশ্বাস তৈরী হয় চাক্ষুস প্রমাণের দ্বারা।এছাড়াও মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা অবয়ব ওপরিচ্ছদ থেকেও আকষ্মিক বিশ্বাস সৃষ্টি হতে পারে। যেভাবেই হোকনা কেন,এই বিশ্বাস যে মানুষের আত্মিক,সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই।দীর্ঘদিনের জানাশোনায় মানুষের মধ্যে যখন সখ্যতা গড়ে উঠে তখন তা থেকে সৃষ্টি হয় বিশ্বাস। আমাদের দৃষ্টির সীমানায় যাকিছু আছে তা আমরা দেখেই বিশ্বাস করি, যা চাক্ষুস প্রমাণ থেকে সৃষ্ট। আবার কোন বিশ্বস্থ মানুষের কাছ থেকে কোন কিছু শুনেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাস করে থাকি। এ ক্ষেত্রে চাক্ষুস প্রমানের প্রয়োজন হয়না, আমরা মধ্যস্বত্তার উপর আমাদের বিশ্বাসকে মেনে নেই। আবার কখনো কখনো একজন লেবাসধারী লোকের কথা তাৎক্ষণিক বিশ্বাস করি এই ভেবে যে তিনি মিথ্যে বলতে পারেননা।আবার কোন কোন বিষয় আছে যা আমরা শুণে বিচার বিশ্লেষন না করেও বিশ্বাস করি তার সম্ভাবতা চিন্তাকরে।নানাভাবে সৃষ্ট এই বিশ্বাস বোধটি আমাদের চিত্তে স্থান করে নেয় কতগুলি বিশেষ বৈশিষ্টের দ্বারা, তা হল চাক্ষুস প্রমান, মধ্যস্বত্বার বিশ্বস্ততা, ঘটনার সম্ভাবতা।আরেক ধরনের বিশ্বাস রয়েছে তা হল ধর্মানুভূতি।এই অনুভূতিতে উপরের বৈ্শিষ্টগুলো উপস্থিতি থাকার কোন বধ্যবাদকতা নেই; সাধারনতঃ মানুষ তা অধিকার করে জন্মগতভাবে। আজকের বিজ্ঞানও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে যে, মানুষের মস্তিস্কে সৃষ্টিগতভাবেই এ অনুভূতি স্থানান্তরিত হয়। অভ্যাস ও অধ্যবসায় দ্বারা তার গভীরতা কমবেশী করা যায়।‘মস্তিস্কে বিধাতার অবস্থান’ প্রবন্ধে এ বিষয়ে আমরা সমান্য আলোচনা করেছি।এই ধর্মানুভুতি সম্পূর্ণই নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর।এর চাক্ষুস কোন প্রমান নেই।
এখন প্রশ্ন হল এই বিশ্বাসের ভিত কতটা শক্ত?যদি বলা হয় এই বিশ্বাসের ভিত খুব শক্ত! তবে প্রশ্ন চলে আসে,‘মানুষ কেন ধর্মান্তরিত হয়?যৌক্তিক কারণে বলতেই হয় যে,তার পুরানো বিশ্বাসের ভিত প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী ছিলনা;কারণ জন্মগতভাবে প্রাপ্ত ধারনার চেয়ে কোন শক্তিশালী ধারনা যদি তার চিত্তকে নাড়া দেয় তখন সে আপন মনেই তার বিশ্বাসকে পাল্টায়।এক্ষেত্রে তার পুরোনো ধারনাকে ঠিক রাখতে হলে তার সামনে চাই কিছু চাক্ষুস প্রমান,না হলে অন্তত পক্ষে পরোক্ষ প্রমানের শক্তিশালী যুক্তি।হয়তো সে কারণেই আদী মানুষটি তার সূর্যের মত শক্তিশালী দেবতাকে ছেড়ে কোন অশরিরী আত্মাকে প্রণাম নিবেদন করেছিল।কালক্রমে বিবর্তন সেরকমই আবাস দেয়।মানুষের বুদ্ধির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধর্মমত;এক একটি ধারনা চলেছে দীর্ঘদিন।এভাবেই পাল্টাতে পাল্টাতে প্রায় ১৪০০ বছর আগে আসে এক নতুন ধারনা। দাবী করা হল এক উম্মী নবীর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এক মহাসত্য বাণীবদ্ধ পবিত্র কোরআন। দাবী করলেইতো মানুষের কাছে সবকিছু গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনা! তারজন্যে চাই গ্রহনযোগ্য ও যৌক্তিক উপস্থাপনা। সবই হল; মূল্যবান কথায় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ এক মহাগ্রন্থ মানুষের সামনে তুলে ধরা হল। অনেকেই তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন, অনেকে ভাবলেন এটি যে স্রষ্টার বাণী তার কি প্রমাণ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের অলৌকিতার দাবীদাররা তখন হতাশ হয়ে পড়লেন।দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চলতে থাকলো কিন্তু কোন সুরাহা করা গেলনা।
বিশ্বাসের পথ ধরেই চলতে থাকলো পবিত্র কোরআনের অগ্রযাত্রা। কালের বিবর্তনে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পবিত্র কোরআন সংগ্রহ করলো অসংখ্য অনুসারী। দিন দিন বিশ্বাসের ভিত শক্ত হতে থাকলে।পাশাপাশি বিজ্ঞান তার কৈাশোর পেরিয়ে যুবাবয়সে এসে নানা আবিস্কারের সূচনা করতে লাগলো।বিজ্ঞানের একএকটা আবিস্কারের পাশাপাশি কোরআন অনুসারীরা চমকে চমকে উঠে বলতে লাগল,‘এইতো! বিশয়টি পবিত্র কোরআনের পাতায় কালির অক্ষরে ছাপা রয়েছে। পবিত্র কোরআন অনুশারীদের মুখ কাঁচা আলোয় রাঙা হয়ে উঠতে লাগলো। সম্ভাব্যতার যাচাইয়ে বিশ্বাসের সেই ছোট্ট চারাগাছটি মহীরুহে রূপন্তরিত হতে লাগলো। কিন্তু কোন অলৌকিকতার প্রমাণ মিলানো গেলনা। মহান গবেষকরা হাল ছেড়ে দিলেননা। পথ চলতে চলতে একদিন হঠাৎ আলোর রেখা দেখাদিল। পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি চোখের সামনে এসে ইশারায় বললো,‘আমাকে চোখে পড়েনা!’ ঘোর কেটে গেল; ধীরে ধীরে আলোর উজ্জ্বলতা বেড়ে চাখে পড়লো ‘১৯’।
সূরা আল মুদ্দাসসির এর্ ৩০-৩১ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
৭৪:৩০ এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা)।
وَمَا جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا وَلَا يَرْتَابَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَالْمُؤْمِنُونَ وَلِيَقُولَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْكَافِرُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَذَا مَثَلًا كَذَلِكَ يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْبَشَر
৭৪:৩১ আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি- যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।
সকলেই উঠে পরে লাগলেন এই আয়াত দু’টির ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে। বেড়িয়ে এল নানা তথ্য। দেখা গেল পবিত্র কোরআনে অক্ষর,শব্দ, আয়াত,সূরা সবই যেন কোন না কোন উপায়ে ১৯ এর সাথে সম্পৃক্ত। খুলে গেল বদ্ধ দুয়ার, সেই খোলাপথে মানুষের দৃষ্টি চলে গেল অনেক দূর। দেখা গেল পবিত্র কোরআন ১৯ এর কাঠামোয় এক রূদ্ধ দূর্গ। বাইরে থেকে যার অন্তস্থল দেখা যায়,বুঝা যায়,কিন্ত তাকে কলুষিত করার জন্যে প্রবেশ করা যায়না। দিনে দিনে ১৯ হয়ে উঠলো পবিত্র কোরআনের রক্ষা কবচ। যার অলৌকিকতার ছটায় বক্র দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআনের দিকে তাকানো যায়না। তাকাতে হয় বিনম্র দৃষ্টিতে অনুগত হয়ে। বলা হল, ১৯ পবিত্র কোরআনের গাণিতিক কোড,যা দিয়ে লিখা হয়েছে পবিত্র কোরআনের সফটওয়ার,যার দৃশ্য রূপ হল কাল হরফের আরবী লেখা।আর এই গাণিতিক কাঠামোই হল পবিত্র কোরআনের প্রামানিক দলিল।কথাটি ব্যাখ্যা করে বুঝাবার আর কোন প্রয়োজন থাকেনা এজেন্যে য, মহান আল্লাহ ৭৪:৩০ নং আয়াতে ১৯ এর সংবাদ দিয়ে ৭৪:৩১ এ বলছেন,এই সংখ্য তিঁনি করেছেন এজন্যে যে,‘যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে’।
দিনে দিনে ১৯ এর অনেক সমন্বয় বেড়িয়ে এল,এগিয়ে চলল কোরআন গবেষনা, উন্মুক্ত বাতায়ন পথে দেখাগেল,পেবিত্র কোরআন শুধু ১৯ এর কাছেই বাধা নয়,রয়েছে ৭ সংখ্যার বিস্ময়কর কাঠামো,রয়েছে ১১ এর সমন্বয়,আরও কত সংখ্যার হিসেব!গবেষকদের অন্তর শুধু বলতেই লাগলো‘ছোবহান আল্লাহ’।বার বার মনে পড়তে লাগলো পাগল বৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক গ্যালিলিওর সেই ভিখ্যাত উক্তি ‘অঙ্ক হল সেই ভাষা,যে ভাষায় স্রষ্টা মহাবিশ্বকে লিখেছিলেন’।বিশ্বাসীগণ অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলেন,বললেন এ কোন রহস্য!কেউ কেউ ক্ষোভে দুঃখে বলতে লাগলেন,আমারা কি বিশ্বাস করিনা,আমাদের বিশ্বাস কি যথেষ্ট নয়,যে প্রমাণের প্রয়োজন আছে?কোরআন শরীফে সংখ্যার আবার হিসেব কি?’
সুধী পাঠক, আমি অধমও অনেক সূধী জন ও পবিত্র কোরআনের মহামান্য ধারক-বাহকদের সাথে কথা বলে দেখেছি, একই প্রশ্নের সমুখীন হয়েছি। প্রকৃতই জটীল প্রশ্ন! অন্তরের পবিত্র বিশ্বাসইতো স্রষ্টার স্বীকৃতি। আর এই বিশ্বাসের জন্যে প্রমাণের যদি আবশ্রকতাই থাকে তবে আর সম্পর্কটি রইল কোথায়। তা হল এইযে,প্রমাণ আমাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করলো। স্রষ্টাকে বিশ্বাসের মধ্যে থাকবে ভালবাসা;যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে প্রমাণ মূখ্য নয়। আমারা আমাদের বাবা-মা,স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্দবদের ভালবাসি, সেখানেতো কোন প্রমাণের প্রয়োজন হয়না।
সূধী পাঠক, উপরের কথাটি নীরেট সত্য, তবে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে,আমাদের আপনজনদের উপস্থিতি সেই ভালোবাসার প্রতি বিশ্বস্ততা তৈরী করে, কিন্তু যেখানে একটা কাল্পনিক অস্তিত্ব ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হয় তখন চিত্ততলে একটা টলটলায়মান সন্দেহের ছায়া উন্মোচিত হয়,যা নানা প্ররোচণায় স্থিরতা পাওয়ার চেষ্টা করে।আর সেই কারণেই প্রমান এ ক্ষেত্রে মহৌষধীর মত কাজ করে। মহান আল্লাহ নিজেও আমাদের বিশ্বাসের উপড় গভীর শ্রদ্ধা রেখে ৭৪:৩১ আয়াতে বলেছেন,‘মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায়’।তার পরেও যদি বিশ্বাসীদের সেই আবেগময় প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় (আমাদের বিশ্বাস কি যথেষ্ট নয়,যে প্রমাণের প্রয়োজন আছে?)তবে তারও একটা আবেগময় জবাব রয়েছে!
আমরা জানি, আল্লাহর নবী হয়রত মূসা আলাইহে সাল্লাম,হাতের লাঠিকে সাপ বানিয়ে আল্লাহর নিদর্শন দেখিয়েছিলেন, হয়রত ঈসা আলাইহেস সাল্লাম অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন,মৃতকে জীবিত করেছিলেন,আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরববাসীদের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করে দেকিয়েছিল।মূসা(আঃ)আল্লাহর দীদার লাভে তুর পাহার ভষ্ম হয়ে গিয়েছিল,হযরত ইব্রাহীম (আঃ);আল্লাহর নিদর্শন দেখতে চেয়েছিলেন; সূরা আল বাক্কারা’র ২৬০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِـي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن قَالَ بَلَى وَلَـكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا وَاعْلَمْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
২:২৬০ আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন।
পরিশেষে স্মরন করুণ আমাদের নবীজি হয়রত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মে’রাজের কথা। কেন এসব ঘটেছিল?
সূধী পাঠক, আমাদের বিশ্বাস কি এ্তটাই বেশী যে, আল্লাহর নবীদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে? একবার লক্ষ্য করুণ ২:২৬০ আয়াতটি,নবী ইব্রহীম (আঃ)পরিস্কার ভাবেই বলছেন,‘কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি’।এর পরেও কি বলবেন আমাদের বিশ্বাসই যথেষ্ট,নিদর্শণ বা প্রমানের দরকার নেই। লক্ষ্য করুন নীচের আয়াতগুলো-
আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ سَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ فَتَعْرِفُونَهَا وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
27:93 এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। এবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।
মহান আল্লাহ্ সূরা ইউনুছ এর ২০ নং আয়াতে বলছেন,
وَيَقُولُونَ لَوْلاَ أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلّهِ فَانْتَظِرُواْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
১০:২০ বস্তুতঃ তারা বলে, তাঁর কাছে তাঁর পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ এল না কেন? বলে দাও গায়েবের কথা আল্লাহই জানেন। আমি ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
সূরা আল আনআম আয়াত 109-111
وَأَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِن جَاءتْهُمْ آيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَا قُلْ إِنَّمَا الآيَاتُ عِندَ اللّهِ وَمَا يُشْعِرُكُمْ أَنَّهَا إِذَا جَاءتْ لاَ يُؤْمِنُونَ
৬:১০৯ তারা জোর দিয়ে আল্লাহর কসম খায় যে, যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে, তবে অবশ্যই তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে। আপনি বলে দিনঃ নিদর্শনাবলী তো আল্লাহর কাছেই আছে। হে মুসলমানগণ, তোমাদেরকে কে বলল যে, যখন তাদের কাছে নিদর্শনাবলী আসবে, তখন তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেই ?
وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَنَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
৬:১১০ আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় ত্যাগ করব ও তারা উদভ্রান্তের মত ঘুরবে।
৬:১১১ আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে অবতারণ করতাম এবং তাদের সাথে মৃতরা কথাবার্তা বলত এবং আমি সব বস্তুকে তাদের সামনে জীবিত করে দিতাম, তথাপি তারা কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী নয়; কিন্তু যদি আল্লাহ চান। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুর্খ।
মহান আল্লাহ সূরা আল আনকাবুত এর ৫০-৫১ আয়াতে বলছেন,
وَقَالُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَاتٌ مِّن رَّبِّهِ قُلْ إِنَّمَا الْآيَاتُ عِندَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
29:50 তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।
أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَرَحْمَةً وَذِكْرَى لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
29:51 এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে।
এখন প্রশ্ন হল সেই নিদর্শন কি আমাদের এই গাণিতিক কাঠামো বা সংখ্যার অবস্থান?
সূধী পাঠক,ভাষা সাহিত্যে ‘স্থান কাল পাত্র’ বলে একটা শব্দগুচ্ছ প্রায়শ্চঃ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় আমাদেরকেও তৎকালীণ মানুষের চিন্তা চেতনা ও সামাজিক অবস্থানের কথা ভাবতে হবে, ভাবতে হবে তদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষদের অবস্থানের কথা,ভাবতে হবে ধর্মীয় চিন্তাচেতনার পরিপক্কতার কথা।কালের বহু বিবর্তনে আজকের মানুষের সেই অবস্থান অনেকটাই উন্নীত হয়েছে,দূরদৃষ্টির প্রখরতা বেরেছে। তাছাড়াও নবী রসুলদের আগমন গেছে বন্দ হয়ে। ফলে চাক্ষুষ নিদর্শণ দেখার আর সুযোগ রইল কোথায়? সম্ভবত মহান আল্লাহ আজকের এই পরিপক্ক মস্তিস্কের মানুষের জন্যেই কোরআনের বাণীবদ্ধ নিদর্শণ গুলো এতদিন ধরে মানুষেরই জ্ঞানদৃষ্টির আড়াল করে রেখেছিলেন। যখন তা উন্মুক্ত হল তখন তাকে আর অস্বীকার করার পথ রইলনা। এই গাণিতিক কাঠামো আজ কোরআনের অলৌকিকতার প্রথম ধাপ হয়ে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যাবার পথ দেখাচ্ছে।
সূরা হা-মীম, আয়াত ৩৭;
وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
৪১:৩৭ তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর।
দেখুন মহান আল্লাহর আরেকটি বিষ্ময়কর আয়াত,সূরা আল জিন আয়াত ২৮ এ মহান আল্লাহ বলছেন,
لِيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا
৭২:২৮ যাতে আল্লাহ তা’আলা জেনে নেন যে, রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কি না। রসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।
এখানে আয়াতের শেষ শব্দটি হল ‘আদাদা’ عَدَدًا, যার অর্থ সব কিছু গুণে রেখেছেন; অর্থাত সবকিছু সংখ্যায় হিসাব করা। আমরা কি করে স্বীকার করবো যে,মহান আল্লার কাছে সংখ্যার কোন মূল্য নেই।
সূধী পাঠক,পবিত্র কোরআন বিভিন্ন সংখ্যার গাণিতিক সমন্বয়ে সমন্বিত হয়ে আছে।এই গাণিতিক সমন্বয়কে উণ্মোচিত করে মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থের অলৌকিকতাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন;আর এটিই হল আজকের যুগে মহা প্রভুর বিশেষ নিদর্শন।আমরা এই নিদর্শন অবলোকন করে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারি।
তারপরেও কিছু অনুরাগী মানুষ আবেগের আতিসয্যে বলে থাকে, ‘আমাদের বিশ্বাসই আমাদেরকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোন প্রমানের প্রয়োজন নেই, সংখ্যার কোন হিসব দিয়ে আমাদের বিশ্বাসকে গাঢ়করার প্রয়োজন নেই।’
অত্যান্ত শ্রদ্ধাভরে বলতেচাই,বিশ্বাসই আমদেরকে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেবে; এটিই একমাত্র পথ, আর এই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই আমাদের ধর্মমত এগিয়ে চলে।একটা বিষয় আজ অবদি বৈজ্ঞানীক ভাবে প্রমানিত না হলেও আমাদের সামাজিক জীবন ও ধর্মীয় জীবনে অদৃশ্যভাবেই অনুমেয় যে,শয়তান আমাদেরকে নানাভাবে বিচ্যুত করার চেষ্ট করে ও অবশেষে বিচ্যুত করে।শয়তানের ধোকা থেকে নিজের আত্মাকে রক্ষা করতে হলে চাই আমাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস।আর এই বিশ্বাস যদি কোন প্রমানের দ্বারা স্বীকৃত হয় তবে তা এতটাই মজবুত হয় যে,ধোকার সম্মুখীন হলেই সেই প্রমাণ বা নিদর্শন এসে আমাদের চোখের সামনে প্রতীরক্ষা বেষ্ঠনী হয়ে দাঁড়ায়।তাই এই প্রমানগুলোকে আমাদের খুঁজে নেওয়া দরকার।যা চোখের সামনে জ্বল জ্বল মহান স্রষ্টার বাণীগুলোকে অলৌকিকতার মর্যাদা দেবে।
সূধী পাঠক,পবিত্র কোরআনের গাণিতিক সমন্বয় সম্পর্কে যৎসামান্য ধারণার লক্ষ্যে আমরা ‘পবিত্র কোরআনের গাণিতিক সমন্বয়’ গ্রন্থের প্রথম পর্বটি উন্মুক্ত করে দিলাম,মহান আল্লাহ যদি আমাদেরকে সুযোগ দান করেন তবে পরবর্তীতে এ বিষয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো। এজন্যে আপনাদের দোওয়া কাম্য। পরিশেষে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করলাম;
সূরা আয যুমার এর ১৮ নং আয়াত,
الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ وَأُوْلَئِكَ هُمْ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
৩৯:১৮ যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।